বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ,
আস্সালামু আলাইকুম।
আপনারা সকলেই জানেন এবংবোঝেন যে, সরকার দেশকে আবারো এক গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
আমরা এ সংকট চাইনি বলেই চরম বিতর্কিত নির্বাচনের ফল মেনে নিয়ে প্রথম দিনেই আমরা সংসদে যোগ দেই। সরকারকেআমরা ভালো কাজে সহযোগিতার কথা বলি। কিন্তু গত প্রায় আড়াই বছরে প্রমাণ হয়ে গেছে যে, এ সরকার কেবল অযোগ্যও ব্যর্থই নয়, তারা চরম হঠকারিও বটে।
দশ টাকা কেজি দরে চাল, ঘরে ঘরে চাকরি, ফ্রি সারসহ জনগণকে দেয়া চটকদার ওয়াদাগুলোর একটাও তারা পূরণ করেনি।জনগণের কল্যাণের কোনো চিন্তা তাদের নেই। তারাব্যস্ত দলীয় ও ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের কাজে।
জাতীয় স্বার্থ তারা রক্ষা করতে পারেনি। বিদেশী প্রভুদের কাছে দেয়া গোপন অঙ্গীকার তারা পূরণ করে চলেছে একের পর এক।
এই সরকারের লোকেরা এবং তাদের আত্মীয়-স্বজন লুটপাট করে দেশের সম্পদবিদেশে পাচার করছে। তাদের দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের কথা কেউ বললেইজেল-জুলুম, হামলা-মামলায় তার কণ্ঠ স্তব্ধকরে দিচ্ছে। বিভিন্ন হীন পন্থায় তারা হরণ করেছে সংবাদ-মাধ্যমের স্বাধীনতা।
এই সরকারের অপশাসনে কোথাও কারো কোনো স্বস্তি, শান্তি ও নিরাপত্তা নেই। তাদের দলীয় ক্যাডারদের গুন্ডামি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখল ও সন্ত্রাসে জনজীবন বিপর্যস্ত।
নগ্ন দলীয়করণে পুলিশ ও সিভিল প্রশাসন আজ অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির অভাবে জনজীবনে নাভিশ্বাস দেখা দিয়েছে। জিনিসপত্রের দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বিদ্যুৎ দিতে নাপারলেও দাম বাড়ানো হচ্ছে দফায় দফায়। বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দামও।
বেড়ে গেছে যানবাহনের ভাড়া। গরীব ও মধ্যবিত্তমানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।
এই সরকারের হাতে অর্থনীতি হয়েছে বিপর্যস্ত। উন্নয়ন-উৎপাদন মুখ থুবড়ে পড়ছে।কলকারখানা বন্ধ হচ্ছে। মানুষ চাকরি হারাচ্ছে। সরকারের অযোগ্যতা ও ব্যর্থতায় বিদেশে কর্মরত প্রবাসী নাগরিকরা চাকরি হারিয়ে ফেরত আসছে। নতুন কোনো কর্মসংস্থান হচ্ছে না। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ। আওয়ামী লীগ সরকারের লোকেরা তাদের আগেকার শাসন আমলের মতো এবারেও সুপরিকল্পিতভাবে শেয়ারবাজার লুণ্ঠন করে ৩৩ লাখ খুদে বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়েছে। তদন্তের নামে প্রহসন করে অপরাধীদের আড়াল করা হয়েছে। ব্যাংকে টাকা নেই। একটুবড় অংকের চেক দিলেই তারা টাকা দিতে পারছে না। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যস্থবির হয়ে পড়েছে। অথচ সরকার ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা কর্জ নিয়ে সংকটকে আরো ঘণীভূত করছে।
সাংবাদিক ভাই-বোনেরা,
এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর কুচক্রিদের ষড়যন্ত্রে পিলখানায় ঘটে যায় মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড। অসহায়ভাবেপ্রাণ হারান সেনাবাহিনীর ৫৭ জন চৌকস মেধাবী অফিসার। নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত হনসেনা পরিবারের সদস্যরা। সেই ভয়ঙ্কর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের নামে অর্ধশতাধিক বিডিআর সদস্যকে রহস্যজনক মৃত্যুর পথে ঠেলে দিয়ে অপরাধীদের পরিচয় আড়াল করা হয়েছে।
জাতীয় প্রতিরক্ষা ও সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার এতো বড় ক্ষতিসত্ত্বেও সরকার নির্বিকার।
আমাদের সীমান্ত আজ অরক্ষিত। চোরাচালানের পণ্যে দেশ ভরে গেছে। বাংলাদেশী নাগরিকদের নিয়মিত নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চলছে। ফেলানীর মতো অসহায় কিশোরীর লাশ ঝুলে থাকছেকাঁটাতারে। তাঁবেদার সরকারের প্রতিবাদ করার সাহসও নেই।
ট্রানজিটের নামে প্রতিবেশী দেশকে একতরফা ভাবে করিডোর সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বিনিময়ে আমরা কিছুই পাইনি।
সরকারের লোকেরা আগে দেশের মানুষকে মিথ্যা রূপকথা শুনিয়ে বলেছিল যে, ট্রানজিট দিলে দেশ নাকি সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে। আর এখন তারা প্রতিবেশী দেশের কাছ থেকে ফি কিংবা শুল্ক আদায়ও করতে পারছে না।
আওয়ামী লীগের লোকেরা এখন বলছে, ট্রানজিটের জন্য ফি চাইতে গেলে আমরা নাকি অসভ্য হয়ে যাব। দেশবাসী বুঝতে পারছেন এরা কতটা নতজানু!কোনো ক্ষেত্রে এই সরকারআড়াই বছরে সামান্যতম সাফল্য দেখাতে পারেনি। বরং ব্যর্থতার পর্বতের নিচে চাপা পড়ে এখন তারা মিথ্যাচার, অত্যাচার ও ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী হয়তো বুঝতে পারছেন, দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তার ফলাফলকী দাঁড়াবে। মানুষের হতাশা ও ক্ষোভ যে এখন ক্রোধে পরিণত হচ্ছে সে কথাও তার না বোঝার কথা নয়। এই শোচনীয় পরাজয় এড়াতে প্রধানমন্ত্রী এখন নিজে ক্ষমতায় থেকে সংসদ নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছেন।
আমরা এও জানি যে, ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করার স্বপ্ন পূরণ না হলে তিনি চাইবেন তার অনুগত সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে প্রধান করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে। আর তিনি নির্ভর করবেন তথাকথিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের উপর।
বাংলাদেশের প্রতিটি সচেতন মানুষ জানেন যে, আওয়ামী লীগের অধীনে কখনো কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। তারা বোঝেন যে, নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে প্রধানমন্ত্রী আবারো ক্ষমতায় ফিরে আসতে চান।তাই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান তুলে দেয়ার যে কথা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তাতে দেশের মানুষ আতঙ্কিত।
সংবিধান সংশোধনের নামে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান তুলে দেয়ার ঘোষণার বিরুদ্ধে প্রতিটি সচেতন মানুষ ইতিমধ্যেই সোচ্চার হয়ে উঠেছেন।
কেবল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দেয়াই নয়, তথাকথিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের নামে প্রধানমন্ত্রী মেকানিক্যাল বা ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে জনগণের ভোটের রায় পালটে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন।
মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার এবং তাদের ভোট নিয়ে জাল-জালিয়াতিরঅপচেষ্টা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা প্রতিহত করবোইনশাহ্আল্লাহ।
সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আপনারা জানেন, এই আওয়ামী লীগ ১৯৯৩ সাল থেকে জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের নামে দেশজুড়ে কী ভয়ঙ্কর নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল। অসহযোগের নামে তারা বন্দর অচল, ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও করেছে। দলীয় আমলাদেরকে বিদ্রোহী করে তথাকথিত জনতার মঞ্চে শামিল করেছে। প্রশাসন তছনছ করেছে।
অনেক মানুষের প্রাণহানী ঘটেছে। ধ্বংস হয়েছে বহু মূল্যবান জাতীয় সম্পদ।
সে সময় বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। আমরা অনেক আলোচনারআহ্বান জানিয়েছি। তারা সাড়া দেননি। নির্বাচন কমিশনকে আমরা শক্তিশালী ও সকল পক্ষেরকাছে গ্রহণযোগ্য করে পুনর্গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছি, তারা মানেনি।
বিদেশীরা পর্যন্ত মধ্যস্থতার প্রস্তাব করে ব্যর্থ হয়েছেন, আওয়ামী লীগ রাজি হয়নি।
তারা দিনের পর দিন হরতাল করেছে। গণকার্ফু জারি করে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে জনগণকে জিম্মি করে ফেলেছে।
জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমরা তাদের দাবি মেনে নিয়ে সকল জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের বিধান রেখে সংবিধান সংশোধন করেছিলাম। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ সরকারও গঠন করেছে। সেই আওয়ামী লীগ এখন বলছে, তত্ত্বাবধায় সরকারের কোনো প্রয়োজন নেই।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
তত্ত্বাবধায়ক সরকার তুলে দেয়ার কথা আওয়ামী লীগ বলছে আপিল বিভাগের একটি রায়ের ধুয়া তুলে।
এ প্রসঙ্গে আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার :
্#৬১৫০১; সংবিধান সংশোধনের সম্পূর্ণ এখতিয়ার জনগণের নির্বাচিত সংসদের, কোনোআদালতের নয়।
্#৬১৫০১; কাজেই, সংবিধানসংশোধনের জন্য কোনো আদালতের কোনো রায়ের বাস্তবায়ন পার্লামেন্টের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
্#৬১৫০১; অতীতে উচ্চ আদালতকে বিভক্ত করার বিরুদ্ধে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের দেয়া রায় ছিল আইনজীবী সমাজ, আন্দোলনকারী সকল রাজনৈতিক দল ও সমাজশক্তির আকাঙ্খার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। কাজেই সেই রায়টির বাস্তবায়ন জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতেই হয়েছিল। এবারকার ঘটনা সম্পূর্ণ বিপরীত।
্#৬১৫০১; সংবিধান সম্পর্কে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের দেয়া আলোচ্য রায়টি সর্বসম্মত নয়। বিচারপতিরাই এই রায়ের ব্যাপারে একমত হতে পারেননি।
্#৬১৫০১; আলোচ্য রায়টি জনগণের ব্যাপক অংশের দ্বারা তুমুল সমালোচিত হচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এ রায় মেনে নিতে পারেননি।
্#৬১৫০১; বিতর্কিত এই রায়টি আইন ও সংবিধানসম্মত নয়। পরস্পরবিরোধী, দুর্বল, যুক্তিহীন ও বিতর্কিত।
্#৬১৫০১; যে সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে এই রায় দেয়া হয়েছে তিনি ইতিমধ্যে নানা প্রশ্নবোধক কর্মকাণ্ডের জন্য বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন।
্#৬১৫০১; বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী সম্মানিত নাগরিক প্রফেসর ড. ইউনূস, এমন কিবিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে আমি নিজে তার কাছ থেকে কোনো ন্যায়বিচার পাইনি।
্#৬১৫০১; মুন সিনেমা হলের মালিকানা সংক্রান্ত একটি মামলার রায়ে এই বিচারপতি সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেন। চরম বিভ্রান্তিকর এই রায়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রতিফলন ঘটেছে। প্রতিটি ছত্রে ফুটে উঠেছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বিএনপি সম্পর্কে চরম বিরূপ মনোভাব। আওয়ামী লীগের প্রতি অনুরাগ ও বিএনপিরপ্রতি বিরাগের বসবর্তী হয়ে যে তিনি এ রায় দিয়েছেন তা বুঝতে কারো অসুবিধা হয়না। অর্থাৎ তিনি কোনো ভাবেই নিরপেক্ষ নন।
্#৬১৫০১; এই বিতর্কিত বিচারপতিকে পদোন্নতি দিতে আওয়ামী লীগ সরকারকে আপিল বিভাগের সদস্য সংখ্যা সাত থেকে বাড়িয়ে এগারো জন করতে হয়েছিল।
্#৬১৫০১; দুইজন যোগ্য ও দক্ষ বিচারপতিকে ডিঙ্গিয়ে তাকে বর্তমান সরকার প্রধান বিচারপতি করেছিল।
্#৬১৫০১; কাজেই, জনগণের সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, সরকারের জন্য সুবিধাজনক ও মনমতো রায় পাওয়ার উদ্দেশ্যেই তাকে নানাভাবে পুরষ্কৃত করা হয়েছিল।
্#৬১৫০১; সরকারের অনুগ্রভাজন এই ধরনের বিচারপতির রায়ের ছুতা ধরেই আজ সংবিধান বদল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা চলছে।
্#৬১৫০১; এই বিতর্কিত রায়ের একটি অংশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান আরো দুই মেয়াদ বহাল রাখা যাবে বলে যে মত দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার এখন সেটিও এড়িয়ে যেতে চাইছে।
সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আমরা পরিষ্কার বলে দিতেচাই, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা বাতিল করার ব্যাপারে দেশের জনগণের কাছ থেকে কোনো অনুমোদন এই সরকার নেয়নি। কাজেই আদালতের রায় কিংবা অন্য কোনো অজুহাতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজন দেশবাসী মানবে না, আমরাও মেনে নেব না।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ইতিমধ্যেই ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগ ও মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের সূচনা করেছে। আমরা মনে করি এই সরকার যত বেশি দিন ক্ষমতায় থাকবে দেশ ও জাতির তত বেশি ক্ষতি হতে থাকবে। তাই সরকারেরপ্রতি আমাদের আহ্বান, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন।
সরকারের পদত্যাগের পর আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সবপক্ষের মতামত নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হবে। একইভাবে গঠন করতে হবে একটি নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন। সেই সরকার ও কমিশনের অধীনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তারাইদলীয়করণকৃত প্রশাসনকে ঢেলে সাজিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দলীয় সরকারেরঅধীনে প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগের বিরুদ্ধে এবং জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় বিএনপি আগামীকাল রোববার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অভিন্ন দাবিতে একই সময় হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই হরতাল কোনো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থে নয়। এই হরতাল জাতীয় স্বার্থে। এই হরতাল জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষার জন্য।
এই হরতাল দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংকট, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি রোধএবং দেশ ও জনগণের স্বার্থ, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও শেয়ার বাজাররক্ষায় ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগের মাধ্যমে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে। সেই হরতালে সকলকে শরিক হওয়ার জন্য আমি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
সরকারের তরফ থেকে ইতিমধ্যে জনগণের আন্দোলনের বিরুদ্ধে হুমকি দেয়া হয়েছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি ওআটক করা হচ্ছে। আমি আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তি এবং হয়রানি ও গ্রেফতার বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।
হরতাল চলাকালে কোনো ধরণের নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধেও আমি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করছি।
সরকার আমাদের দাবি মেনেনিয়ে পদত্যাগ না করলে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের অপচেষ্টা থেকে বিরত না হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আগামীতে আরো কঠোর ও টানা আন্দোলনের কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
প্রধানমন্ত্রী একেক সময় একেক রকম কথা বলছেন। বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে ফায়দা হাসিল করতে চাইছেন।
কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বলেছিলেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল থাকবে। আর এখন বিতর্কিত এক রায়ের ছূতা ধরে বলছেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারবহাল রাখার কোনো সুযোগইনেই।
বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আবার তিনি বিরোধী দলকে সংসদে এসে মতামত দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
কোনো সুযোগই যদি না থাকে তাহলে বিরোধী দলেরমতামত দিয়ে লাভ কী?
দেশবাসী দেখতে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন যে, প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনকেও প্রহসনে পরিণত করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ সব দল নিষিদ্ধ করে গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছিল। বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একদলীয় স্বৈরশাসন প্রবর্তন করেছিল। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে পছন্দের সরকার বেছে নেয়ার যে অধিকার জনগণেরছিল, তা কেড়ে নিয়েছিল। নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের সব পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল। আজ আবার তারা সেই একই পথঅবলম্বন করছে।
আজ আবার শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের সব পথ বন্ধ করে দেয়ার যে অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে,তার পরিণাম ও পরিণতি সম্পর্কে আমি সরকারকে সতর্ক করে দিচ্ছি।
পরিশেষে, সময় থাকতে সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে, এই প্রত্যাশা রেখে আমার বক্তব্য আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
সকলকে ধন্যবাদ।
আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
আতিকুর রহমান রিপন
কুয়েত
তারিখ: ঢাকা, ৪ জুন, ২০১১